দিন ৪- জীবনের অর্থ
আপনার উপর সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছুক কিনা এই প্রশ্নটি শুরু করার আগে , চলুন তাঁর সম্পর্কে এবং তার পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।
কেনো একজন সৃষ্টিকর্তা মহাবিশ্ব, পৃথিবী এবং এর মধ্যকার সবকিছু তৈরি করতে যাবেন? তিনি কি তাঁর আগের অবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন? তিনি কি উদাস ছিলেন এবং কোনো অভিযানের সন্ধান করছিলেন? তিনি কি এমন কিছু করতে চেয়েছিলেন যা তাঁকেও অবাক করে দেবে?
এবং তিনি কেন এর পুরোটা ধ্বংস করে দিলেন না যখন তিনি জানলেন যে তাঁর সৃষ্টি সর্বোপরি চমৎকার কিছু হবে না?
কেমন হয় যখন এগুলোর পেছনে সুবিশাল কোন পরিকল্পনা আছে, যা হয়তো আমাদের বোধশক্তির বাইরে? আমরা কি এর একটু হলেও বুঝি? যদি তাই হয়, এই বিশাল পরিকল্পনাটি কেমন?
বিশাল পরিকল্পনা প্রকাশ পেয়েছে
এমন কি হতে পারে সৃষ্টিকর্তা তাঁর মহত্ত্ব তাঁর সৃষ্টির সাথে ভাগাভাগি করতে এই
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন?
সৃষ্টিকর্তার প্রতি একটা জীব কিভাবে তার সম্মান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে? সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতাই এ পার্থক্য সৃষ্টি করেঃ যদি একটি জীব তার সৃষ্টিকর্তাকে গ্রহণ ও সম্মান করতে চায়, করতে পারে আবার সে অস্বীকারও করতে পারে। যাইহোক, যখন কোনো জীব তার সৃষ্টিকর্তাকে উপেক্ষা বা বিরোধিতা করে; তা অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার প্রতি অসম্মান করার সমান। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে একটি শিশু তার বাবা অথবা মা এর অস্তিত্ব অস্বীকার করছে।
এই অকল্পনীয় মহৎ সৃষ্টিকর্তার সামনে কিভাবে একটি জীব দাঁড়াবে? এই সৃষ্টিকর্তাকে নির্ভুল কাজ চাইতে হয়, কেননা তাঁকে নৈতিকভাবে বিশুদ্ধ ও নিখুঁত হতে হয়ঃ এগুলোই আমারা আমাদের চারপাশে দেখতে পারি। সর্বোপরি, তিনি যদি নিয়মিত, বিশুদ্ধ এবং নিখুঁত না হতেন, তাহলে সারা বিশ্বে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো।
আমাদের যদি সৃষ্টিকর্তার ছবি আঁকতে হয়, তাহলে আমাদের দেখতে হবে কিভাবে প্রকৃতির আইন কাজ করে। সমগ্র মহাবিশ্ব এই নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে কাজ করে, এটি বিবেচনা করে বলা যায় যে এর স্থপতি নিশ্চয়ই নিয়ম ও কাঠামোর সৃষ্টিকর্তা।
আপনি যদি প্রকৃতির এই আইনগুলোয় ব্যাঘাত ঘটাতে পারতেন, তাহলে সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলাই শুরু হতো। যেহেতু আমারা প্রকৃতিতে দেখতে পাই যে সবকিছুই হয় নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে হয়। আমরা যে জীবনের সাথে পরিচিত তা এসব আইন দ্বারাই নিশ্চিত হয়। আমরা যেমন মানুষ এবং ফুলের মধ্যে প্রক্রিয়া ও কাঠামোর অনেক জটিল সমষ্টি দেখেছি যেগুলো আলাদা করা যাবে না।
প্রকৃতির আইনের কখনোই ব্যাঘাত বা উপেক্ষা করা যায় না। যদি হতো, তাহলে পুরো সিস্টেম অনেক আগেই বিশৃঙ্খলায় রূপ নিত। প্রকৃতির আইনের পরিণতি সাধারণ এবং স্বচ্ছ। আপনি আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারেন কিন্তু আপনি মধ্যাকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারবেন না। আপনাকে মানতে হবে যে মধ্যাকর্ষণ সেখানে রয়েছে এবং আপনি খুব কম বয়স থেকেই পড়ে যাওয়া ও উঠে পড়ার মাধ্যমে এর সাথে বসবাসে অভ্যস্থ হবেন।
সবই নিয়মের প্রভাব, যদি একবার একটি ত্রুটি ঘটে, ‘শাস্তি’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুসরণ করবে।এটি জীবনের একটি ভাল পরিদর্শিত সত্য। উদাহরণস্বরূপ, আপনি মাধ্যাকর্ষণ অস্বীকার করতে পারবেন না।আপনি এটিকে ঘুষ দিতে পারেন না, আপনার এর সাথে চলতে হবে।
সৃষ্টিকর্তার সাথে সম্পর্কও অনেকটা এরকম; আপনি যদি তাঁকে উপেক্ষা করেন বা তাঁর পরিকল্পনা অমান্য করেন, তাহলে আপনার আর মূল্য থাকবে না। ঠিক যেমন কৃষক তার মাঠ থেকে আগাছা সরিয়ে ফেলবে এবং সেই ফসল ফলাবেন যা তিনি বৃদ্ধি করতে চান।
সৃষ্টিকর্তা সত্যিই অকপট হবেন: কিছু জিনিস ভাল হয়, আবার কিছু জিনিষ মন্দ হয়। তাকে কোন উৎকোচ দেয়া যায় না, এমনটা আমাদের দেখা প্রকৃতির নিয়ম থেকে প্রমাণ করা যায়।
আপনি কি এই পরিকল্পনার অংশ?
যদি সৃষ্টিকর্তাকে উপেক্ষা করা কারোর সরাসরি দণ্ডাদেশে পরিণত হয়, তাহলে মতের স্বাধীনতার মানে কী? জীবিত থাকা অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট মূহুর্ত পর, সময় শেষ হয়ে যায়। যদি কোনো জীব তার সৃষ্টিকর্তাকে উপেক্ষা করতে থাকে, সবশেষে এই জীবের আর কোনো মুল্যই থাকবে না।
হয়ত আপনি আপনার চারপাশে পরিকল্পনা না মেনে চলা লোকদের ফলাফল দেখতে পারেনঃ
- কেন ধনী লোক, এমনকি বিখ্যাত ও সুস্থ ব্যক্তিরা প্রায়ই তাদের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন না?
- কেনো সবচেয়ে ধনী এবং শক্তিশালী লোকজন প্রায়ই তাদের অবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট?
- বস্তুনিষ্ঠ লক্ষ্য তে পৌঁছানো কি একজনকে সম্পূর্ণরুপে সন্তুষ্ট করতে পারে? আপনার যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে সেখানে সবসময়ই আরো চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আছে
- কেন মানুষ মরতে ভর ভয় পায়? কারণ শুধুমাত্র মৃত্যুর পর জীবন শেষ বলে?
আমরা একটা শূন্যতা অনুভব করি, আরও পাওয়ার অভাব অনুভব করি। আমরা জীবনের একটা অর্থ চাই।
আজকের জন্য এতটুকুই, নিচের বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করুনঃ
- আমি সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা নিয়ে যে বিবরণ দিয়েছি তা কি বুঝা গেছে?
- যদি কোনো পরিকল্পনা থাকে, তাহলে আপনার ভূমিকা কি সেখানে?
- আপনি আপনার জীবনের জন্য দায়ি হতে চাছেন?
- সৃষ্টিকর্তার সাথে আপানার বর্তমান সম্পর্ক কি?
আগামীকাল দিন ৫ এ আবার আসার জন্য আপনাকে স্বাগতম জানানো হলো !